আজ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দে হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার কথা।২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর নিউটাউন ডিবি ব্লকে আইনজীবী রজত দে-কে রহস্যজনক ভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।অতঃপর কয়েকদিনের মধ্যেই, ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখে রজত দে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তারই আইনজীবী স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে কে।
অর্থাৎ গ্রেপ্তার হওয়ার এক বছর নয় মাস চোদ্দো দিনের মাথায় আইনজীবীর রহস্যময় হত্যা মামলার রায় শোনাবে বারাসাত আদালত।জন মানুষে আলোড়ন ফেলা রজত দে হত্যা মামলার পরতে পরতে ছিল চাঞ্চল্যকর প্রসঙ্গ। অবশেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করতে চলেছে বারাসাত আদালত।

আইনজীবী খুনে ধৃত অনিন্দিতা পাল দের জন্য আদালতের কোন রায় অপেক্ষা করে আছে তা আজ শোনার প্রতীক্ষায় উদগ্রীব বাদী – বিবাদী পক্ষ তথা আইনজীবী মহল। কারণ খুন হওয়া রজত দে ও তার খুনে অভিযুক্ত অনিন্দিতা পাল দে উভয়েই আইনজীবী এবং স্বাভাবিক কারণেই উভয়েই বহু আইনজীবীর ঘনিষ্ঠ।
ফলে যুগপৎ ভাবে অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি ঘটনা ও কৌতূহল উদ্রেক কারী এক মামলার যবনিকা পড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক দশ মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বারাসাত আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন অনিন্দিতা পাল দে।
২০১৯ সালের ১ অক্টোবর বারাসাত আদালত থেকে অনিন্দিতা পাল দে জামিন পেলেও তা ছিল অস্থায়ী রক্ষাকবচ। দ্ৰুত মামলার রায় ঘোষণার দিকে লক্ষ্য রেখে এগোতে থাকে বিচার প্রক্রিয়া।




উল্লেখ্য, পুলিশ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর নিউ টাউনের বহুতল আবাসনে নিজের ফ্ল্যাটে ৩৪ বছর বয়সী রজত দে কে মৃত অবস্থায় পাওয়ার পরে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বা ইউ ডি -র মামলা রুজু করে। কিন্তু এরপরেই মৃতের বাবা সমীর কুমার দে র অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি খুনের মামলা রুজু করে।
মৃতের বাবা সমীর কুমার দে অভিযোগ করেন তাঁর পুত্রবধূ অনিন্দিতা পাল দের এই হত্যাকাণ্ডে যোগ রয়েছে। একই সাথে তিনি অভিযুক্ত অনিন্দিতার মা-বাবা এবং ভাইয়ের নামেও অভিযোগ করেন।শুরু হয় তদন্ত।নিউটাউন থানায় ডাকও পড়ে অনিন্দিতার।অনিন্দিতা পুলিশ কে জানান রজত দের মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক মৃত্যু।
অটোপসি রিপোর্ট প্রকাশ পেতেই তদন্ত অন্য মাত্রা পায়। অটোপসি রিপোর্টে ধরা পড়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল রজত দে কে। আইনজীবীর খুনের বিষয় নিশ্চিত হতেই পুলিশ তদন্তে নয়া মোড় আসে। তদন্তে প্রকাশ পায় সুক্ষ তার জাতীয় কিছু দিয়েই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় রজত দে কে।
দ্ৰুত পট পরিবর্তন হতে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে।প্রাথমিক ব্রেক থ্রু আসে যখন অনিন্দিতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানায় রজত দে কে মোবাইলের চার্জার দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছিল।অনিন্দিতাকে বিশেষ ভাবে জেরা শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ জানায় আট ঘন্টা জেরা করার পরে খুনের অভিযোগ কবুল করে নেয় অনিন্দিতা। অনিন্দিতাকে গ্রেপ্তার করার পরেই তৎকালীন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ জানান, একটানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে অনিন্দিতা ভেঙ্গে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।




ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২(হত্যা), ৩৪ ও ১২০ বি(ষড়যন্ত্র তথা অপরাধের ষড়যন্ত্র) এবং ২০১ ধারায় অভিযুক্ত হয় অনিন্দিতা পাল দে এবং শুরু হয় রজত দে হত্যা মামলা।বিভিন্ন রকম গুঞ্জন ওঠে এই মামলাকে ঘিরে। প্রাথমিক ভাবে একাধিক সূত্র থেকে একাধিক চাঞ্চল্যকর অথবা মুখরোচক তথ্য উঠে আসে গণ মাধ্যমে।
কখনো শোনা যায় এ আর অ্যাসোসিয়েটসে(অনিন্দিতা রজত অ্যাসোসিয়েটস) নিজেদের আর্থিক বোঝাপড়ার গোলযোগে ক্ষেপে ওঠে অনিন্দিতা। কখনো বলা হয় তৃতীয় ব্যক্তির মদতে বলিষ্ঠ রজত দে কে খুন করে রোগা চেহারার অনিন্দিতা।
কিন্তু পুলিশ প্রকাশ্যে এই খুনের কারণ প্রাথমিক ভাবে প্রকাশ করে নি।১ ডিসেম্বর অনিন্দিতা পাল দে কে গ্রেপ্তার করার পরের দিনই অনিন্দিতাকে তোলা হয় বারাসাত আদালতে।
সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী অসহযোগিতার অভিযোগ করেন অনিন্দিতার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে অনিন্দিতা। প্রথমে স্বাভাবিক মৃত্যু, পরে আত্মহত্যা বললেও শেষে হত্যা বলে স্বীকার করেছে অনিন্দিতা।




অন্য দিকে অভিযুক্ত অনিন্দিতার উকিল চন্দ্র শেখর বাগ মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গী তে অনিন্দিতা কে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান।জামিনের কারণ হিসেবে অভিযুক্তর আইনজীবী অনিন্দিতার সন্তানের সে সময় দেড় বছর বয়সকে তুলে ধরেন।
সেদিন আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় বারাসাত আদালত।সেই মাসের দশ তারিখে আবার তাকে আদালতে তোলা হলে সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী জানান, রজত দে-র হত্যাকান্ড ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং গুগুল দেখে হত্যাকাণ্ডের ছক কষে অনিন্দিতা।
দ্বিতীয় শুনানীতে ছয়দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর পুলিশ হেফাজত থেকে জেল হেফাজতে এবং বারাসাত আদালতে তোলা এই সব ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগ লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন।তিনি ক্রমাগত অভিযুক্তকে নির্দোষ দাবী করে জানাতে থাকেন, অভিযুক্ত অনিন্দিতা পাল দে র শিশু পুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে মানবিক কারণে জামিন দেওয়া হোক অভিযুক্তকে।
হাইকোর্টে ও জামিনের আবেদন করা হয় এবং হাইকোর্ট ও অনিন্দিতার জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয়। অবশেষে সাময়িক অনিন্দিতার সাময়িক স্বস্তির ইঙ্গিত আসে২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই।
অবশেষে গত বছর-ই অক্টোবর মাসের পয়লা তারিখ জামিনে মুক্তি পান অনিন্দিতা।দীর্ঘ দশ মাস কারান্তরালে থাকার পরে ঘরে ফেরেন অনিন্দিতা। কিন্তু সে স্বস্তি ছিল সাময়িক কারণ আদালত দ্ৰুত চুড়ান্ত নিস্পত্তির দিকে এগোতে থাকে।অবশেষে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ রজত দে হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়। সোমবার প্রতীক্ষার প্রহর।